"Translate In Your Language"

Thursday, 4 April 2013

Photo: ‘‘কবিতা ও স্কেচ”
___মহাদেব সাহা

তুমি দরজা নাও খুলতে পারো
আমি কি পাখি যে সারারাত ভাঙ্গাগলায় তোমাকে
ডাকতে পারবো,
আমি কি নদীর ঢেউ যে আছড়ে পড়তে পারবো
তোমার দুয়ারে এসে,
এমন কি কেউ যে অবিরাম করাঘাত করতে করতে
চেনা কণ্ঠে বলতে পারবো,
দরজা খোলো;

আমি তেমন কেউ নই,
নদীর ঢেউ নই,
রাতের পাখি নই,
পুরনো প্রেমিক নই
যার মৃদু করাঘাতে বিশ্বস্ত ডাকে তুমি তৎক্ষণাৎ
দরজা খুলে দেবে।

আমি জলের স্রোতের মতো, বাতাসের
কাঁপা কণ্ঠস্বরের মতো
অস্থির শিশিরবিন্দুর মতো নিঃশব্দে তোমার
পায়ে ঝরে পড়ি
সেই জল কখনো তোমার চোখে পড়ে, কখনো পড়ে না;
এই সামান্য সঞ্চয় নিয়ে আমি তোমার কাছে খুব
বেশি কী চাইতে পারি?

তুমি ডাক শুনতে পারো, নাও পারো
ফিরে তাকাতে পারো, নাও পারো,
তখনই দরজা খুলে আমাকে অভ্যর্থনা জানাবে
সেতো আশাই করি না।‘‘কবিতা ও স্কেচ”
___মহাদেব সাহা

তুমি দরজা নাও খুলতে পারো
আমি কি পাখি যে সারারাত ভাঙ্গাগলায় তোমাকে
ডাকতে পারবো,
আমি কি নদীর ঢেউ যে আছড়ে পড়তে পারবো
তোমার দুয়ারে এসে,
এমন কি কেউ যে অবিরাম করাঘাত করতে করতে
চেনা কণ্ঠে বলতে পারবো,
দরজা খোলো;

আমি তেমন কেউ নই,
নদীর ঢেউ নই,
রাতের পাখি নই,
পুরনো প্রেমিক নই
যার মৃদু করাঘাতে বিশ্বস্ত ডাকে তুমি তৎক্ষণাৎ
দরজা খুলে দেবে।

আমি জলের স্রোতের মতো, বাতাসের
কাঁপা কণ্ঠস্বরের মতো
অস্থির শিশিরবিন্দুর মতো নিঃশব্দে তোমার
পায়ে ঝরে পড়ি
সেই জল কখনো তোমার চোখে পড়ে, কখনো পড়ে না;
এই সামান্য সঞ্চয় নিয়ে আমি তোমার কাছে খুব
বেশি কী চাইতে পারি?

তুমি ডাক শুনতে পারো, নাও পারো
ফিরে তাকাতে পারো, নাও পারো,
তখনই দরজা খুলে আমাকে অভ্যর্থনা জানাবে
সেতো আশাই করি না।
 

 

Tuesday, 12 March 2013


Photo: ღ❣ ♡ ❤ জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না ❤ ♡ ❣ღ
. . . সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় না-
কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না
শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।
আমার কেউ নাম রখেনি, তিনটে
চারটে ছদ্মনামে
আমার ভ্রমণ মর্ত্যধীমে,
আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার
হাত পুড়ে যায়
অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়
অন্ধকারে মিশে থেকেছি
কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
তবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না
আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।
...

ღ❣ ♡ ❤ জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না ❤ ♡ ❣ღ


. . . সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।


আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় নামৃত্যু হয় না-কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়নাশরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।আমার কেউ নাম রখেনি, তিনটেচারটে ছদ্মনামেআমার ভ্রমণ মর্ত্যধীমে,আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমারহাত পুড়ে যায়অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়অন্ধকারে মিশে থেকেছিকেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছিতবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছিআমার কোনো ভয় হয় নাআমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।... 


ღ❣ ♡ ❤ জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না ❤ ♡ ❣ღ
. . . সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় না-
কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না
শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।
আমার কেউ নাম রখেনি, তিনটে
চারটে ছদ্মনামে
আমার ভ্রমণ মর্ত্যধীমে,
আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার
হাত পুড়ে যায়
অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়
অন্ধকারে মিশে থেকেছি
কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
তবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না
আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।
...
 

Friday, 8 February 2013

কথা ছিল এক-তরীতে কেবল তুমি আমি
যাব অকারণে ভেসে কেবল ভেসে,
ত্রিভুবনে জানবে না কেউ আমরা তীর্থগামী
কোথায় যেতেছি কোন্‌ দেশে সে কোন্‌ দেশে।
কূলহারা সেই সমুদ্র-মাঝখানে
শোনাব গান একলা তোমার কানে,
ঢেউয়ের মতন ভাষা-বাঁধন-হারা
আমার সেই রাগিণী শুনবে নীরব হেসে।

আজো সময় হয় নি কি তার, কাজ কি আছে বাকি।
ওগো ওই-যে সন্ধ্যা নামে সাগরতীরে।
মলিন আলোয় পাখা মেলে সিন্ধুপারের পাখি
আপন কুলায়-মাঝে সবাই এল ফিরে।
কখন তুমি আসবে ঘাটের 'পরে
বাঁধনটুকু কেটে দেবার তরে।
অস্তরবির শেষ আলোটির মতো
তরী নিশীথমাঝে যাবে নিরুদ্দেশে।
কথা ছিল এক-তরীতে কেবল তুমি আমি
যাব অকারণে ভেসে কেবল ভেসে,
ত্রিভুবনে জানবে না কেউ আমরা তীর্থগামী
কোথায় যেতেছি কোন্‌ দেশে সে কোন্‌ দেশে।
কূলহারা সেই সমুদ্র-মাঝখানে
শোনাব গান একলা তোমার কানে,
ঢেউয়ের মতন ভাষা-বাঁধন-হারা
আমার সেই রাগিণী শুনবে নীরব হেসে।

আজো সময় হয় নি কি তার, কাজ কি আছে বাকি।
ওগো ওই-যে সন্ধ্যা নামে সাগরতীরে।
মলিন আলোয় পাখা মেলে সিন্ধুপারের পাখি
আপন কুলায়-মাঝে সবাই এল ফিরে।
কখন তুমি আসবে ঘাটের 'পরে
বাঁধনটুকু কেটে দেবার তরে।
অস্তরবির শেষ আলোটির মতো
তরী নিশীথমাঝে যাবে নিরুদ্দেশে।

‘‘ ১টা তুমি, ১টা আমি ’’
–সামারা তাহসিন তাশফি

তুমি আমার হেঁয়ালি
কমলা-হলুদ রাতবাতি..

আমি তোমার মুঠোভর্তি বেলীর সুরভি
চুপকথায় সোনারূপার জীয়ন কাঠি..

আমার তুমি ক্লান্তি রাতজাগা
ঘুমের চোখে ভোর খুঁজে ফেরা..

তোমার আমি মন খারাপের গোধূলী
ঠোঁট চেপে ধরা নরম আগুনের ফুলকি..

তুমি আমার অজস্র ভাঙ্গাচোরা রাত
কবিতার খাতা জুড়ে কাটাকুটি হাত..

আমি তোমার বালুচরী বিশ্বাস
চিরকুটি প্রেমে মৌন দীর্ঘশ্বাস..

এবং অতঃপর......

ভালবাসায় একটা তুমি একটা আমি,
ইচ্ছে করেই আড়াল রাখি..‘ ১টা তুমি, ১টা আমি ’’
–সামারা তাহসিন তাশফি

তুমি আমার হেঁয়ালি
কমলা-হলুদ রাতবাতি..

আমি তোমার মুঠোভর্তি বেলীর সুরভি
চুপকথায় সোনারূপার জীয়ন কাঠি..

আমার তুমি ক্লান্তি রাতজাগা
ঘুমের চোখে ভোর খুঁজে ফেরা..

তোমার আমি মন খারাপের গোধূলী
ঠোঁট চেপে ধরা নরম আগুনের ফুলকি..

তুমি আমার অজস্র ভাঙ্গাচোরা রাত
কবিতার খাতা জুড়ে কাটাকুটি হাত..

আমি তোমার বালুচরী বিশ্বাস
চিরকুটি প্রেমে মৌন দীর্ঘশ্বাস..

এবং অতঃপর......

ভালবাসায় একটা তুমি একটা আমি,
ইচ্ছে করেই আড়াল রাখি..

সেই গল্পটা
—পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ
কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের
ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘেকে বললে
আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন
জলে।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম
নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের
আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের
ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল
ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই
ভুলতে পারল না।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো
পাহাড়টার হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।সেই গল্পটা
—পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ
কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের
ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘেকে বললে
আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন
জলে।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম
নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের
আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের
ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল
ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই
ভুলতে পারল না।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো
পাহাড়টার হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।

" চোখ নিয়ে চলে গেছে "
__সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এই যে বাইরে হু হু ঝড়, এর চেয়ে বেশী
বুকের মধ্যে আছে
কৈশোর জুড়ে বৃষ্টি বিশাল, আকাশে থাকুক যত মেঘ,
যত ক্ষণিকা
মেঘ উড়ে যায়
আকাশ ওড়ে না
আকাশের দিকে
উড়েছে নতুন সিঁড়ি
আমার দু বাহু একলা মাঠের জারুলের ডালপালা
কাচ ফেলা নদী যেন ভালোবাসা
ভালোবাসার মতো ভালোবাসা
দু‘দিকের পার ভেঙে
নারীরা সবাই ফুলের মতন, বাতাসে ওড়ায়
যখন তখন
রঙিন পাপড়ি
বাতাস তা জানে, নারীকে উড়াল দিয়ে নিয়ে যায়
তাই আমি আর প্রকৃতি দেখি না,
প্রকৃতি আমার চোখ নিয়ে চলে গেছে!" চোখ নিয়ে চলে গেছে "
__সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এই যে বাইরে হু হু ঝড়, এর চেয়ে বেশী
বুকের মধ্যে আছে
কৈশোর জুড়ে বৃষ্টি বিশাল, আকাশে থাকুক যত মেঘ,
যত ক্ষণিকা
মেঘ উড়ে যায়
আকাশ ওড়ে না
আকাশের দিকে
উড়েছে নতুন সিঁড়ি
আমার দু বাহু একলা মাঠের জারুলের ডালপালা
কাচ ফেলা নদী যেন ভালোবাসা
ভালোবাসার মতো ভালোবাসা
দু‘দিকের পার ভেঙে
নারীরা সবাই ফুলের মতন, বাতাসে ওড়ায়
যখন তখন
রঙিন পাপড়ি
বাতাস তা জানে, নারীকে উড়াল দিয়ে নিয়ে যায়
তাই আমি আর প্রকৃতি দেখি না,
প্রকৃতি আমার চোখ নিয়ে চলে গেছে!

মাঝে মাঝে লোডশেডিং


মাঝে মাঝে লোডশেডিং
-পূর্নেন্দু পত্রী

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
আকাশে জ্বলুক শুধু ঈশ্বরের
সাতকোটি চোখ
বাকী সব আলকাতরা মাখুক।
আমরা নিমগ্ন হয়ে নিজস্ব চশমায় আর
দেখি না কিছুই
সকলে যা দেখে তাই দেখি।
আকাশের রঙ তাই
হয়ে গেছে চিরকালে নীল।
বাতাস কি শাড়ি পরে কারো জানা নেই।

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
সাদা মোমবাতি জ্বেলে
তোমাকে সম্পূর্ণ করে দেখি।
নারীকে বাহান্ন তীর্থ
বলেছে শুনেছি এক কবি।
আমি তার গর্ভগৃহ,সরু সিড়ি, সোনার আসন
চন্দনবটিতে থাকে কতটা চন্দন
দেখে গুনে গুনে মেপে দেখে
তবেই পাতাবো মৌরীফুল।মাঝে মাঝে লোডশেডিং
-পূর্নেন্দু পত্রী

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
আকাশে জ্বলুক শুধু ঈশ্বরের
সাতকোটি চোখ
বাকী সব আলকাতরা মাখুক।
আমরা নিমগ্ন হয়ে নিজস্ব চশমায় আর
দেখি না কিছুই
সকলে যা দেখে তাই দেখি।
আকাশের রঙ তাই
হয়ে গেছে চিরকালে নীল।
বাতাস কি শাড়ি পরে কারো জানা নেই।

মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।
সাদা মোমবাতি জ্বেলে
তোমাকে সম্পূর্ণ করে দেখি।
নারীকে বাহান্ন তীর্থ
বলেছে শুনেছি এক কবি।
আমি তার গর্ভগৃহ,সরু সিড়ি, সোনার আসন
চন্দনবটিতে থাকে কতটা চন্দন
দেখে গুনে গুনে মেপে দেখে
তবেই পাতাবো মৌরীফুল।

‘‘ প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ’’
–আবুল হাসান

অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড়
খোঁপা নিয়ে
অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস
নিয়ে
যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ
…যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে আগলা করো কোমলতা,
অন্ধকার মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি ফিরব না আর,
আমি কোনদিন কারো প্রেমিক হবো না;
প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই
আজ আমি সব প্রেমিকের
প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
‘‘ প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ’’
–আবুল হাসান

অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড়
খোঁপা নিয়ে
অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস
নিয়ে
যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ
…যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে আগলা করো কোমলতা,
অন্ধকার মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি ফিরব না আর,
আমি কোনদিন কারো প্রেমিক হবো না;
প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই
আজ আমি সব প্রেমিকের
প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।

‘‘প্রিয়তমা তুমি আছো’’

‘‘প্রিয়তমা তুমি আছো’’
—নীল প্রলয়

তুমি চলমান আমার ভ্রাম্যমান হৃদে
আবিরাম হাঁটছো একপা দু'পা রাঙা চরণে,
সর্বাঙ্গের শিরা উপশিরায় ।

ভবঘুরে আমার ভাবপ্রবণ আঙ্গিনায়
লুকিয়ে আছো দু'চোখের সিংহদ্বারে-
যতই বৃষ্টি ঝরে হয়না তোমার ক্ষয়।

স্তব্ধ রাত্রিতে পাড়ি জমাও অসংজ্ঞায়িত স্বপ্নের ঘোরে ;
সকালে উঠেই ঈশ্বরের কিরণ মাখবে বলে,হারিয়ে যাও
সেই পুরাতন হলুদ শাড়িটা পড়ে ।

ধরণীর আকাশ পাতাল এক করে
উড়ে-উড়ে, ঘুরে-ঘুরে
খোঁজ করো অচেনা মানুষের অপ্রকাশিত পত্র-
অথবা সবুজ বুককে হলুদ ভেবে
চঞ্চু রাখো সুস্বাদু ভোজনে ।

পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঈশ্বর হেলে পড়ে
তোমাকে আমাকে না বলে;
লুকিয়ে যায় নিকষ আঁধারের নগরীতে।
তুমি এসে আমাকে ধরা দাও
দু'হাত ভর্তি জোনাক নিয়ে,
পেতে চাও আমাকে তোমার মতো করে।

যত বাহানা আছে সব জেগে ওঠে
কোটি নক্ষত্রের জাল বুনে,
মিটমিট করে সব কিছু নাও
উশুল করে ।
এইভাবেই তুমি প্রতিদিন, প্রতিরাত
আমাকে সাড়া জাগিয়ে-
তুমি থাকো তোমার মতো করে।

আমি চলতেই থাকি, চলতেই থাকি
একি পথে, একি রাজ্যে
একি জন্ম।
সেই চেনা অচেনা সকল কার্যের ভীড়ে;
প্রিয়তমা তুমি আছো ,তুমি থাকবে।‘‘প্রিয়তমা তুমি আছো’’
—নীল প্রলয়

তুমি চলমান আমার ভ্রাম্যমান হৃদে
আবিরাম হাঁটছো একপা দু'পা রাঙা চরণে,
সর্বাঙ্গের শিরা উপশিরায় ।

ভবঘুরে আমার ভাবপ্রবণ আঙ্গিনায়
লুকিয়ে আছো দু'চোখের সিংহদ্বারে-
যতই বৃষ্টি ঝরে হয়না তোমার ক্ষয়।

স্তব্ধ রাত্রিতে পাড়ি জমাও অসংজ্ঞায়িত স্বপ্নের ঘোরে ;
সকালে উঠেই ঈশ্বরের কিরণ মাখবে বলে,হারিয়ে যাও
সেই পুরাতন হলুদ শাড়িটা পড়ে ।

ধরণীর আকাশ পাতাল এক করে
উড়ে-উড়ে, ঘুরে-ঘুরে
খোঁজ করো অচেনা মানুষের অপ্রকাশিত পত্র-
অথবা সবুজ বুককে হলুদ ভেবে
চঞ্চু রাখো সুস্বাদু ভোজনে ।

পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঈশ্বর হেলে পড়ে
তোমাকে আমাকে না বলে;
লুকিয়ে যায় নিকষ আঁধারের নগরীতে।
তুমি এসে আমাকে ধরা দাও
দু'হাত ভর্তি জোনাক নিয়ে,
পেতে চাও আমাকে তোমার মতো করে।

যত বাহানা আছে সব জেগে ওঠে
কোটি নক্ষত্রের জাল বুনে,
মিটমিট করে সব কিছু নাও
উশুল করে ।
এইভাবেই তুমি প্রতিদিন, প্রতিরাত
আমাকে সাড়া জাগিয়ে-
তুমি থাকো তোমার মতো করে।

আমি চলতেই থাকি, চলতেই থাকি
একি পথে, একি রাজ্যে
একি জন্ম।
সেই চেনা অচেনা সকল কার্যের ভীড়ে;
প্রিয়তমা তুমি আছো ,তুমি থাকবে।

রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বিকশিত আমার প্রান,
মোহের বাধণ আজ বাধণ বিহীন
বেচে থাকার প্রতিটি স্বপ্ন আজ উধাও...
মায়া কাঁচ ভেঙে গেছে লালচে তরলে...!
শিরা উপশিরা দিয়ে বইছে শুধু ভালবাসা…!
রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ শুধু তুমি...!
তুমি, আমার প্রাণ...!

---- সঞ্জয় বিশ্বাস

দু-জনের চোখে আজ খুশির কান্না ভেজা জল ছিল…
বুকের ভেতরের স্পন্দন গুলো কে একাকিত্তর অভাবে ভরিয়ে দিলাম....
চোখে চোখ রেখে, হাতে হাত,
আর দুজনের আঙুল গুলো কে একে অপরের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলাম..!
একটা স্নিগ্ধ আবেগ ভিজিয়ে দিয়ে গেল আমাদের ঠোট...
তোমার সাথে হারিয়ে জেতে বসেছিলাম ধিরে ধিরে....

-------- সঞ্জয় বিশ্বাস

https://www.facebook.com/sanjoy.biswas.50

বিপ্লবী কবিতা

Photo: বিপ্লবী কবিতা
-মেহেদী


দীর্ঘ দিন ধরে অক্লান্ত ভেবেই চলেছি,
লিখবো একটি জ্যান্ত কবিতা -
খুব ধীরে নিজেই হয়ে উঠবে একটি অনির্বচনীয় সত্ত্বা;
স্বপ্ন দেখবে, ভালোবাসবে,
হয়তোবা কোন নারীর সাথে মেতে উঠবে উদ্দাম সঙ্গমে।

কবিতাটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার অবিরাম চেষ্টা-
যেন না হয়ে উঠে কবির মত কুৎসিত!
সেজন্য কত চিন্তা-কাজ, সহস্র শব্দের আনাগোনা মাথার ভেতরেঃ
ধ্যানী শিল্পীর নিমগ্নতা দিয়ে সযত্ন প্রয়াসে গড়ে তুলবো
কবিতার শরীর।

তার থাকবে এমনই আত্ম-ক্ষমতা-
আমি যা পারিনি করতে কঠিন সংগ্রামে,
তা ঘটাবে নির্লিপ্ত অনায়াসে।
আর এমনই স্বপ্নবান হবে যে,
আমার নির্বিকারত্বকে ভরিয়ে তুলবে সকল মানুষের ইচ্ছা পূরনে-
পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আকাশের দিকে পারবে ছুড়ে দিতে।

তার জন্মমাত্র প্রথম কাজই হবে কবিকেই হত্যা করা,
নইলে সে হাতে পায়ে বেড়ে উঠতে পারবেনা।
কবির লাশের উপর উদ্দাম নৃত্য করবে এমনই সে দুর্দান্ত!

একদিন প্রসন্ন ভোরবেলায়
সকল কবিতাকে ডেকে করবে একত্রিত,
মানুষের বিরুদ্ধে শুরু হবে প্রলম্বিত সংগ্রাম,
একে একে খুন হবে সকল কবি ও মানুষ।
তারপর চালু হবে কবিতার শাসন।
ওদের দাবী হবে একটাইঃ
এই পৃথিবী, কবিতা বাদে আর সবকিছু বাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে।
কবিতা যুগে থাকবে কবিতা গাছ, কবিতা নদী, কবিতা সাগর, কবিতা পাহাড়;
আগুন, পানি, মাটি, বাতাস সবকিছুই পরিণত হবে কবিতায়-
সুর্যও সকালে উঠবে একটি জ্বলজ্বলে কবিতা হয়ে,
চাঁদের গায়েও লেগে থাকবে কবিতার কলঙ্ক।

আমি নিজের জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছি এই কারনে যে,
এরপর কবিতা যুগ আসুক-
সে মহান বিপ্লবে নেতৃত্ব দিবে আমার লেখা একটি ছোট্ট কবিতা।বিপ্লবী কবিতা
-মেহেদী


দীর্ঘ দিন ধরে অক্লান্ত ভেবেই চলেছি,
লিখবো একটি জ্যান্ত কবিতা -
খুব ধীরে নিজেই হয়ে উঠবে একটি অনির্বচনীয় সত্ত্বা;
স্বপ্ন দেখবে, ভালোবাসবে,
হয়তোবা কোন নারীর সাথে মেতে উঠবে উদ্দাম সঙ্গমে।

কবিতাটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার অবিরাম চেষ্টা-
যেন না হয়ে উঠে কবির মত কুৎসিত!
সেজন্য কত চিন্তা-কাজ, সহস্র শব্দের আনাগোনা মাথার ভেতরেঃ
ধ্যানী শিল্পীর নিমগ্নতা দিয়ে সযত্ন প্রয়াসে গড়ে তুলবো
কবিতার শরীর।

তার থাকবে এমনই আত্ম-ক্ষমতা-
আমি যা পারিনি করতে কঠিন সংগ্রামে,
তা ঘটাবে নির্লিপ্ত অনায়াসে।
আর এমনই স্বপ্নবান হবে যে,
আমার নির্বিকারত্বকে ভরিয়ে তুলবে সকল মানুষের ইচ্ছা পূরনে-
পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আকাশের দিকে পারবে ছুড়ে দিতে।

তার জন্মমাত্র প্রথম কাজই হবে কবিকেই হত্যা করা,
নইলে সে হাতে পায়ে বেড়ে উঠতে পারবেনা।
কবির লাশের উপর উদ্দাম নৃত্য করবে এমনই সে দুর্দান্ত!

একদিন প্রসন্ন ভোরবেলায়
সকল কবিতাকে ডেকে করবে একত্রিত,
মানুষের বিরুদ্ধে শুরু হবে প্রলম্বিত সংগ্রাম,
একে একে খুন হবে সকল কবি ও মানুষ।
তারপর চালু হবে কবিতার শাসন।
ওদের দাবী হবে একটাইঃ
এই পৃথিবী, কবিতা বাদে আর সবকিছু বাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে।
কবিতা যুগে থাকবে কবিতা গাছ, কবিতা নদী, কবিতা সাগর, কবিতা পাহাড়;
আগুন, পানি, মাটি, বাতাস সবকিছুই পরিণত হবে কবিতায়-
সুর্যও সকালে উঠবে একটি জ্বলজ্বলে কবিতা হয়ে,
চাঁদের গায়েও লেগে থাকবে কবিতার কলঙ্ক।

আমি নিজের জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছি এই কারনে যে,
এরপর কবিতা যুগ আসুক-
সে মহান বিপ্লবে নেতৃত্ব দিবে আমার লেখা একটি ছোট্ট কবিতা।
 

 


Tuesday, 11 December 2012


'নন্দিনীর চিঠি শুভঙ্কর কে-৮'
—পূর্ণেন্দু পত্রী

আজকাল প্রায়ই
বিকেল হওয়ার আগে বিকেলের আলো নিভে যায়।
আজকাল প্রায়ই
সময় হওয়ার ঢের আগে-ভাগে এসে যায়
ঘুমোবার রাত।

আকাশের এত কাছে শুয়ে থাকি, তবুও আকাশ
গায়ে জড়ানোর সরু আঁচলের খুঁটটুকুকেও
খুলে নিতে মুখ গোমড়ায়।
নক্ষত্রের আলো লেগে পাছে,
বত্তিচেল্লী যে-রকম আলোর প্রতিভা দিয়ে
নিজের নায়িকা গড়েছেন
আমার সর্বাঙ্গ সেই চিরন্তন আলো পেয়ে যায়,
জ্যোস্নাকে নিভিয়ে দেয়, নিভবার সময়ের আগে।

আমারই যে ভুল।
মনের সমস্ত কথা খুলে বলেছি এদের।
তুমি আজ কি বলেছ
তুমি কাল কি কি বলেছিলে
তোমার চোখের অভ্রখানি থেকে ঠিকরোয়
কি রকম উল্কার ঝলক
তোমার চিঠির ভাঁজে ভাঁজে পা গুটিয়ে শুয়ে থাকে কোন খরস্রোত
সমস্ত বলেছি।
এমন কি তোমার আঙুল
শরীরের ঘাটে ঘাটে তানপুরার জলধ্বনি
কিভাবে বাজায়।

আজকাল তাই
পাট-ভাঙা শাড়ি পরে লিপষ্টিক ঠোঁটে ছোঁয়ালেই
আকাশ বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে।
তোমার চিঠির খাম খুললেই সূর্য ডুব যায়।

(কাব্যগ্রন্থ : কথোপকথন)


" কৃত্তিবাস "
-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ছিলে কৈশোর যৌবনের সঙ্গী, কত সকাল,
কত মধ্যরাত,
সমস্ত হল্লার মধ্যে ছিল সুতো বাঁধা,
সংবাদপত্রের খুচরো গদ্য
আর প্রইভেট টিউশানির টাকার অর্ঘ্য
দিয়েছি তোমাকে, দিয়েছি ঘাম,
ঘোরঘুরি, ব্লক, বিজ্ঞাপন, নবীন কবির
কম্পিত বুক, ছেঁড়া পাঞ্জাবি
ও পাজামা পরে কলেজপালানো দুপুর,
মনে আছে মোহনবাগান
লেনের টিনের চালের ছাপাখানায়
প্রুফ নিয়ে বসে থাকা ঘন্টার পর
ঘন্টা, প্রেসের মালিক কলতেন,
খোকা ভাই, অত চার্মিনার খেও না,
গা দিয়ে মড়া পোড়ার গন্ধ বেরোয়, তখন
আমরা প্রায়ই যেতাম
শ্মশানে, শরতের কৌতুক ও শক্তির
দুর্দান্তপনা, সন্দীপনের চোখ মচকানো,
এর কী দুরন্ত নাচ
সমরেন্দ্র, তারাপদ আর উৎপলের
লুকোচুরি, খোলা হাস্য
জমে উঠেছিল এক নদীর কিনারে,
ছিটকে উঠেছিল জল, আকাশ
ছেয়েছিল লাল রঙের ধুলোয়, টলমল
করে উঠেছিল দশ দিগন্ত, তারপর
আমরা ব্যক্তিগত জাতীয় সঙ্গীত
গাইতে-গাইতে বাতাস সাঁতরে চলে
গেলাম নিরুদ্দেশে।



" অভিশাপ "
- কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মর” কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুজবে।

গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আসবে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
আসবে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল
গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই - থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না'ক আর সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
আসবে না ক’ আর সে!
প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার গাঙে আসবে জোয়ার,
দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
সখার কারা-বন্ধ!
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
বইতে প্রাণের শান- এ ভার
মরণ-সনে বুঝবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায়
বাজবে আমার কাঁদনী-
চৈতী-রাতের চাঁদনী।
ঋতুর পরে ফির্বে ঋতু,
সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে,
জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হানত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত
হ’য়ে শ্রান–
আসবে তখন পান’।
হয়ত তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
চাপবে বুকে বাহু বেঁধে,
চরণ চুমে পূজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!


'তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি'
– মহাদেব সাহা

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি
তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই,
যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে
ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি,
তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই
এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি;
তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি
আমার কিছুই আর করার থাকে না।

তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই
যদি ডুবে যেতে চাই
তুমি দুহাতে জাগাও।
এমন সাধ্য কী আছে তোমার চোখের
সামান্য আড়াল হই,
দুই হাত দূরে যাই
যেখানেই যেতে চাই সেখানেই
বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা,
তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনও সম্ভব
তুমি সমুদ্রের চেয়েও সমুদ্র
আকাশের চেয়েও আকাশ তুমি আমার
ভেতরে জেগে আছো।

তোমাকে ভুলতে চেয়ে তাই আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি,
তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে
আরো কাছে টেনে নেই
যতোই তোমার কাছ
থেকে আমি দূরে যেতে চাই
ততো মিশে যাই নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে,
ততোই তোমার আমি হয়ে পড়ি ছায়ার মতন;
কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও
জায়গা থাকে না
তুমিই জড়িয়ে রাখো তোমার কাঁটায়।

তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়েছি
তোমাকে ভুলতে গিয়ে আরো ভালোবেসেছি তোমাকে।


'বকুল ফুল কোথায় পাব প্রিয়?'
—শাহরিয়াজ মুত্তাকিন

কাছে এসো, ছুঁয়ে দেখি আগুনে পুড়ে কি-
না মন, নাকি বরফশীতলে জমে যায় আঙুল।
এসো, কাছে এসো, ছুঁয়ে দেখি চুল।

তোমাকে, তোমার হাত ছোঁব বলে, কত আগুনের জলে ধুঁয়ে শুদ্ধ করেছি হাত।
কতভাবে ছোঁয়া যায়,
মুঠো করে দেখেছি রাতের পর রাত।

আজ সেই দিন, আজ থেকে প্রতিদিন সেই দিন।
কথা দিচ্ছি-
আজকের চেয়ে কাল
তোমাকে বেশি ভালবাসব।
আজকের চেয়ে কাল তোমার দুঃখ
আরো কমিয়ে দেব।
কথা দিচ্ছি-
পরম্পরায় বাড়তে থাকবে সুখ আজ থেকে প্রতিদিন,
কাছে এসো, ছুঁয়ে দেয় মুখ।

Wednesday, 21 November 2012

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


____ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ~*
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


____ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ~*

Saturday, 17 November 2012

আমি যদি হতাম বনহংস;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;

তাহলে আজ এই ফাল্পুনের রাতে
ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে
আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রুপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-
তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে
সোনার ডিমের মতো
ফাল্গুনের চাঁদ।
হয়তো গুলির শব্দঃ
আমাদের তির্যক গতিস্রোত,
আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,
আমাদের কণ্ঠে উত্তর হাওয়ার গান!

হয়তো গুলির শব্দ আবারঃ
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকত না:
থাকত না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;
আমি যদি বনহংস হতাম,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে।


___ জীবনানন্দ দাশ ~*
 
ওলো সই , ওলো সই ,
আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই ।
ছড়িয়ে দিয়ে পা দুখানি কোণে বসে কানাকানি ,
কভু হেসে কভু কেঁদে চেয়ে বসে রই ॥
ওলো সই , ওলো সই ,
তোদের আছে মনের কথা , আমার আছে কই ।
আমি কী বলিব , কার কথা , কোন্‌ সুখ , কোন্‌ ব্যথা –
নাই কথা , তবু সাধ শত কথা কই ॥
ওলো সই , ওলো সই ,
তোদের এত কী বলিবার আছে ভেবে অবাক হই ।
আমি একা বসি সন্ধ্যা হলে আপনি ভাসি নয়নজলে ,
কারণ কেহ শুধাইলে নীরব হয়ে রই ॥
 
 

Monday, 12 November 2012


আমার জ্বলে নি আলো অন্ধকারে
দাও না সাড়া কি তাই বারে বারে॥
তোমার বাঁশি আমার বাজে বুকে কঠিন দুখে, গভীর সুখে--
যে জানে না পথ কাঁদাও তারে॥
চেয়ে রই রাতের আকাশ-পানে,
মন যে কী চায় তা মনই জানে।
আশা জাগে কেন অকারণে আমার মনে ক্ষণে ক্ষণে,
ব্যথার টানে তোমায় আনবে দ্বারে॥


আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন -
আমার ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন ।।
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন...
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ।।
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে ।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন,
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন…..


আমারে তুমি অশেষ করেছ,
এমনি লীলা তব–
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব
নব।
কত-যে গিরি কত-যে নদী-তীরে
বেড়ালে বহি ছোট এ বাঁশিটিরে,
কত যে তান বাজালে ফিরে ফিরে
কাহারে তাহা কব।।
তোমানি ঐ অমৃতপরশে আমার হিয়াখানি
হারালো সীমা বিপুল হরষে, উথলি’
উঠে বাণী।
আমার শুধু একটি মুঠি ভরি
দিতেছ দান দিবস-বিভাবরী–
হল না সারা কত-না যুগ ধরি,
কেবলি আমি লব।

শ্যাম, মুখে তব মধুর অধরমে হাস বিকাশত কায়,
কোন স্বপন অব দেখত মাধব, কহবে কোন হমায়!
নীদ‐মেঘ‐’পর স্বপন‐বিজলি‐সম রাধা বিলসত হাসি।
শ্যাম, শ্যাম মম, কৈসে শোধব তূঁহুক প্রেমঋণরাশি
বিহঙ্গ, কাহ তু বোলন লাগলি, শ্যাম ঘুমায় হমারা।
রহ রহ চন্দ্রম, ঢাল ঢাল তব শীতল জোছনধারা
তারকমালিনী সুন্দরযামিনী অবহুঁ ন যাও রে ভাগি—
নিরদয় রবি অন কাহ তু আওলি জ্বাললি বিরহক আগি।
ভানু কহত অব, রবি অতি নিষ্ঠুর, নলিনমিলন‐অভিলাষে
কত নরনারিক মিলন টুটাওত, ডরত বিরহহুতাশে॥


তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি
গানের সুরে ॥
যেমনি নয়ন মেলি যেন মাতার স্তন্যসুধা-হেন
নবীন জীবন দেয় গো পুরে গানের সুরে ॥
সেথায় তরু তৃণ যত
মাটির বাঁশি হতে ওঠে গানের মতো।
আলোক সেথা দেয় গো আনি
আকাশের আনন্দবাণী,
হৃদয়মাঝে বেড়ায় ঘুরে গানের সুরে ॥
তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি
গানের সুরে ॥
যেমনি নয়ন মেলি যেন মাতার স্তন্যসুধা-হেন
নবীন জীবন দেয় গো পুরে গানের সুরে ॥
সেথায় তরু তৃণ যত
মাটির বাঁশি হতে ওঠে গানের মতো।
আলোক সেথা দেয় গো আনি
আকাশের আনন্দবাণী,
হৃদয়মাঝে বেড়ায় ঘুরে গানের সুরে ॥
তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি
গানের সুরে ॥
যেমনি নয়ন মেলি যেন মাতার স্তন্যসুধা-হেন
নবীন জীবন দেয় গো পুরে গানের সুরে ॥
সেথায় তরু তৃণ যত
মাটির বাঁশি হতে ওঠে গানের মতো।
আলোক সেথা দেয় গো আনি
আকাশের আনন্দবাণী,
হৃদয়মাঝে বেড়ায় ঘুরে গানের সুরে ॥

এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়--
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার--
জগতে কেহ যেন নাহি আর॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব--
আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার॥
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়--
এমন ঘনঘোর বরিষায়॥

রাগ: দেশ
তাল: রূপক
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৭ মে, ১৮৮৯
রচনাস্থান: খিরকী, পুনে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর


দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া
ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ।
ও পারেতে সোনার কূলে আঁধারমূলে কোন্‌ মায়া
গেয়ে গেল কাজ-ভাঙানো গান।
নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা
ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায়,
তাদের পানে ভাঁটার টানে যাব রে আজ ঘরছাড়া--
সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
দিনশেষের শেষ খেয়ায়।

ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,
পারে যারা যাবার গেছে পারে;
ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে
সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে।
ফুলের বাহার নেইকো যাহার, ফসল যাহার ফলল না--
অশ্রু যাহার ফেলতে হাসি পায়--
দিনের আলো যার ফুরালো, সাঁজের আলো জ্বলল না,
সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
বেলাশেষের শেষ খেয়ায়।

সাঁজের বেলা ভাঁটার স্রোতে ও পার হতে একটানা
একটি-দুটি যায় রে তরী ভেসে।
কেমন করে চিনব ওরে ওদের মাঝে কোন্‌খানা
আমার ঘাটে ছিল আমার দেশে।
অস্তাচলে তীরের তলে ঘন গাছের কোল ঘেঁষে
ছায়ায় যেন ছায়ার মতো যায়,
ডাকলে আমি ক্ষণেক থামি হেথায় পাড়ি ধরবে সে
এমন নেয়ে আছে রে কোন্‌ নায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
দিনশেষের শেষ খেয়ায়..


আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে গোপন তব চরণ ফেলে
নিশার মতো, নীরব ওহে, সবার দিঠি এড়ায়ে এলে।
প্রভাত আজি মুদেছে আঁখি, বাতাস বৃথা যেতেছে ডাকি,
নিলাজ নীল আকাশ ঢাকি নিবিড় মেঘ কে দিল মেলে॥
কূজনহীন কাননভূমি, দুয়ার দেওয়া সকল ঘরে--
একেলা কোন্‌ পথিক তুমি পথিকহীন পথের 'পরে।
হে একা সখা, হে প্রিয়তম, রয়েছে খোলা এ ঘর মম,
সমুখ দিয়ে স্বপনসম যেয়ো না মোরে হেলায় ঠেলে॥


তোমারে পাছে সহজে বুঝি তাই কি এত লীলার ছল -
বাহিরে যবে হাসির ছটা ভিতরে থাকে আঁখির জল।
বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -
যে কথা তুমি বলিতে চাও সে কথা তুমি বল না।।

তোমারে পাছে সহজে ধরি কিছুরই তব কিনারা নাই -
দশের দলে টানি গো পাছে কিরূপ তুমি, বিমুখ তাই।
বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -
যে পথে তুমি চলিতে চাও সে পথে তুমি চল না।।

সবার চেয়ে অধিক চাহ, তাই কি তুমি ফিরিয়া যাও -
হেলার ভরে খেলার মতো ভিক্ষাঝুলি ভাসায়ে দাও?
বুঝেছি আমি, বুজেছি তব ছলনা -
সবার যাহে তৃপ্তি হল তোমার তাহে হল না।।


তোমারে পাছে সহজে বুঝি তাই কি এত লীলার ছল -
বাহিরে যবে হাসির ছটা ভিতরে থাকে আঁখির জল।
বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -
যে কথা তুমি বলিতে চাও সে কথা তুমি বল না।।

তোমারে পাছে সহজে ধরি কিছুরই তব কিনারা নাই -
দশের দলে টানি গো পাছে কিরূপ তুমি, বিমুখ তাই।
বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা -
যে পথে তুমি চলিতে চাও সে পথে তুমি চল না।।

সবার চেয়ে অধিক চাহ, তাই কি তুমি ফিরিয়া যাও -
হেলার ভরে খেলার মতো ভিক্ষাঝুলি ভাসায়ে দাও?
বুঝেছি আমি, বুজেছি তব ছলনা -
সবার যাহে তৃপ্তি হল তোমার তাহে হল না।।


আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও,
কে আমারে কী-যে বলে ভোলাও ভোলাও॥
ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে,
বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও॥
মনে পড়ে, কত-না দিন রাতি
আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথি।
আজকে তুমি তেমনি ক'রে সামনে তোমার রাখো ধরে,
আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ তোলাও॥

পায়ে পড়ি তোমার, একটা গল্প লেখো তুমি শরৎবাবু,
নিতান্তই সাধারণ মেয়ের গল্প--
যে দুর্ভাগিনীকে দূরের থেকে পাল্লা দিতে হয়
অন্তত পাঁচ-সাতজন অসামান্যার সঙ্গে--
অর্থাৎ, সপ্তরথিনীর মার।
বুঝে নিয়েছি আমার কপাল ভেঙেছে,
হার হয়েছে আমার।
কিন্তু তুমি যার কথা লিখবে
তাকে জিতিয়ে দিয়ো আমার হয়ে,
পড়তে পড়তে বুক যেন ওঠে ফুলে।
ফুলচন্দন পড়ুক তোমার কলমের মুখে।

তাকে নাম দিয়ো মালতী।
ওই নামটা আমার।
ধরা পড়বার ভয় নেই।
এমন অনেক মালতী আছে বাংলাদেশে,
তারা সবাই সামান্য মেয়ে।
তারা ফরাসি জর্মান জানে না,
কাঁদতে জানে।

কী করে জিতিয়ে দেবে।
উচ্চ তোমার মন, তোমার লেখনী মহীয়সী।
তুমি হয়তো ওকে নিয়ে যাবে ত্যাগের পথে,
দুঃখের চরমে, শকুন্তলার মতো।
দয়া কোরো আমাকে।
নেমে এসো আমার সমতলে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাত্রির অন্ধকারে
দেবতার কাছে যে অসম্ভব বর মাগি--
সে বর আমি পাব না,
কিন্তু পায় যেন তোমার নায়িকা।
রাখো-না কেন নরেশকে সাত বছর লণ্ডনে,
বারে বারে ফেল করুক তার পরীক্ষায়,
আদরে থাক্‌ আপন উপাসিকামণ্ডলীতে।
ইতিমধ্যে মালতী পাস করুক এম| এ|
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে,
গণিতে হোক প্রথম তোমার কলমের এক আঁচড়ে।
কিন্তু ওইখানেই যদি থাম
তোমার সাহিত্যসম্রাট নামে পড়বে কলঙ্ক।
আমার দশা যাই হোক
খাটো কোরো না তোমার কল্পনা।
তুমি তো কৃপণ নও বিধাতার মতো।
মেয়েটাকে দাও পাঠিয়ে য়ুরোপে।
সেখানে যারা জ্ঞানী, যারা বিদ্বান, যারা বীর,
যারা কবি, যারা শিল্পী, যারা রাজা,
দল বেঁধে আসুক ওর চার দিকে।
জ্যোতির্বিদের মতো আবিষ্কার করুক ওকে--
শুধু বিদুষী ব'লে নয়, নারী ব'লে।
ওর মধ্যে যে বিশ্বজয়ী জাদু আছে
ধরা পড়ুক তার রহস্য, মূঢ়ের দেশে নয়--
যে দেশে আছে সমজদার, আছে দরদি,
আছে ইংরেজ জর্মান ফরাসি।
মালতীর সম্মানের জন্য সভা ডাকা হোক-না,
বড়ো বড়ো নামজাদার সভা।
মনে করা যাক সেখানে বর্ষণ হচ্ছে মুষলধারে চাটুবাক্য,
মাঝখান দিয়ে সে চলেছে অবহেলায়--
ঢেউয়ের উপর দিয়ে যেন পালের নৌকো।
ওর চোখ দেখে ওরা করছে কানাকানি,
সবাই বলছে ভারতবর্ষের সজল মেঘ আর উজ্জ্বল রৌদ্র
মিলেছে ওর মোহিনী দৃষ্টিতে।
(এইখানে জনান্তিকে বলে রাখি
সৃষ্টিকর্তার প্রসাদ সত্যই আছে আমার চোখে।
বলতে হল নিজের মুখেই,
এখনো কোনো য়ুরোপীয় রসজ্ঞের
সাক্ষাৎ ঘটে নি কপালে।)
নরেশ এসে দাঁড়াক সেই কোণে,
আর তার সেই অসামান্য মেয়ের দল।

আর তার পরে?
তার পরে আমার নটেশাকটি মুড়োল,
স্বপ্ন আমার ফুরোল।
হায় রে সামান্য মেয়ে!
হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যয়!

আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে
তারই ছায়া পড়েছে গগণতলে ।।
সে দিন যে রাগিণী গেছে থেমে ,
অতল বিরহে নেমে গেছে থেমে ,
আজি পুবের হাওয়ায় হাওয়ায় হায় হায় হায় রে
কাঁপন ভেসে চলে ।।
নিবিড় সুখে মধুর দুখে জড়িত ছিল সেই দিন-
দুই তারে জীবন বাঁধা ছিল বীণ।
তার ছিরে গেছে কবে
একদিন কোন হাহা রবে
সুর হারায়ে গেল পলে পলে ।।


ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে ,ভাই, ভাষাতীত ....
আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে, ভাই, আশাতীত !!!
যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর- কিছু নাই ---
সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি .....
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাস...See More


যা হারিয়ে যায় তা আগলে ব'সে রইব কত আর ?
আর পারি নে রাত জাগতে, হে নাথ, ভাবতে অনিবার ..!
আছি রাত্রি দিবস ধ'রে দুয়ার আমার বন্ধ ক'রে
আসতে যে চায় সন্দেহে তায় তাড়াই বারে বার ..!
তাই তো কারো হয় না আসা আমার একা ঘরে ।
আনন্দময় ভুবন তোমার বাইরে খেলা করে ।
তুমিও বুঝি পথ নাহি পাও, এসে এসে ফিরিয়া যাও-
রাখতে যা চাই রয় না তাও, ধুলায় একাকার ..!!


ওরে পাখি,
থেকে থেকে ভুলিস কেন সুর,
যাস নে কেন ডাকি--
বণীহারা প্রভাত হয় যে বৃথা
জানিস নে তুই কি তা।
অরুণ-আলোর প্রথম পরশ
গাছে গাছে লাগে,
কাঁপনে তার তোরই যে সুর
পাতায় পাতায় জাগে--
তুই যে ভোরের আলোর মিতা
জানিস নে তুই কি তা।
জাগরণের লক্ষ্মী যে ওই
আমার শিয়রেতে
আছে আঁচল পেতে,
জানিস নে তুই কি তা।
গানের দানে উহারে তুই
করিস নে বঞ্চিতা।
দুঃখরাতরে স্বপনতলে
প্রভাতী তোর কী যে বলে
নবীন প্রাণের গীতা,
জানিস নে তুই কি তা।

Sanjoy Biswas's Blog

Sanjoy Biswas's Blog
মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
বেশ, বলতে পরি
ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো
ফুলপিসিমার বাড়ি
গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন
তখন মানে ? কবে ?
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে
ছাদের থেকে হাতছানি দিতো
ক্যারাম খেলবি ? … আয় …
সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায়
সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয়
হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।

ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে
জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে
শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল
ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল
এই এখানে … না ওখানে ..
এই এইটা না ঐটা
ঝাঁপিয়ে পরে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা
ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরন
প্রথম মরা মানে ?
বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে।
চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায়
কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায়
খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক
কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুরে খাক
খাক হোয়া সেই কলশি আবার পরের বছর জলে …
ভরল কেমন তোমায় ? …
ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? …
আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই
সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই
দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে
ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে
আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি
মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি।

---জয় গোস্বামী

মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
বেশ, বলতে পরি
ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো
ফুলপিসিমার বাড়ি
গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন
তখন মানে ? কবে ?
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে
ছাদের থেকে হাতছানি দিতো
ক্যারাম খেলবি ? … আয় …
সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায়
সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয়
হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।

ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে
জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে
শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল
ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল
এই এখানে … না ওখানে ..
এই এইটা না ঐটা
ঝাঁপিয়ে পরে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা
ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরন
প্রথম মরা মানে ?
বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে।
চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায়
কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায়
খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক
কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুরে খাক
খাক হোয়া সেই কলশি আবার পরের বছর জলে …
ভরল কেমন তোমায় ? …
ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? …
আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই
সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই
দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে
ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে
আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি
মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি।

---জয় গোস্বামী

>৩<

Sunday, 11 November 2012

খুঁজেছি তোমায় রাতের জোছনায়,
খুঁজেছি তোমায় সাগরের নীলিমায়,
খুঁজেছি তোমায় শরতের শুভ্র মেঘে,
খুঁজেছি তোমায় কল্পনার প্রতিটি মায়ায়...।।
সেই তুমি,
কখনো খুঁজে দেখনি আমায়,
রাতের নিস্তব্ধ কালো ছায়ায়..................।।

অবাক আমি তাই হারিয়ে যাই ঐ দূর অসীম ছায়ায় .........।।

Saturday, 10 November 2012

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’ শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা–
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না– তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!

তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!

---আবুল হাসান

>৩<